মানিক হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি: “ডিলার যোগাযোগ করে বাজারের ডিম আড়ৎদার ও মুরগী ব্যবসায়ীদের সাথে। টাকা আসে ডিলারের কাছে, টাকা পাই ডিলারের মাধ্যমে। মুরগীর বাচ্চা, ঔষধ ও মুরগীর খাবার ডিলারের কাছ থেকে নিতে হয়। এক প্রকারে ডিলারের কাছে ঋণে ডুবে জিম্মি আমরা। অন্যদিকে খামারের দ্রব্যজাত জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।” -এমনটি জানালেন মুরগী খামারী আবদুল্লাহ।

প্রতি বস্তা মুরগীর খাবারের দাম ২৩০০ টাকা। ডিলার ছাড়া বড় বড় খামারীরা কোম্পানীর কাছ থেকে ২২৫০ টাকায় নিচ্ছেন। ডিমের ব্যবসার জন্য মুরগীর খামারীরা প্রতিটি মুরগীর বাচ্চা ৩৫ টাকা করে ১ দিনের বাচ্চা নিয়ে আসে। ৫ মাস পরে ডিম দিয়ে থাকে। মুরগী থেকে ১৪/১৫ মাস ডিম পাওয়া যায়। ডিম পাড়া মুরগী ১৯/২০ মাস পরে বাজারজাত করা হয়। ডিম ব্যবসার মুরগীর জন্য সবসময় যত্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাবা হয়ে থাকে আবহাওয়া আর যত্নের ওপর মুরগী ব্যবসা নির্ভরশীল । বর্তমান পরিস্থিতিতে লাভ লোকশান। ডিলারের ওপর নির্ভর করছে।

পবা উপজেলার দিঘীর পারিলা গ্রামে বাড়ি মুরগী খামারী আব্দুল্লাহ ২০১৪ সালে ৫ শতক জমির ওপরে ১০০০ লেয়ার মুরগীর খামার করে । বর্তমানে তাঁর খামারে ১৮’শো যেখানে ডিম পায় ১৫০০ টি। ডিম উৎপাদনকারী খামারিরা বলছেন, আমিষের চাহিদা পূরণে ডিমের ভূমিকা অন্যতম। এই সম্ভাবনাময় খাত বর্তমানে নানা সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে। উৎপাদন খরচ উঠছে না। এসব মুরগি ১২০ দিন থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে কিন্তু তার আগে মুরগি পালনের যে খরচ পড়ছে তা অত্যাধিক। এরপর ডিম উৎপাদনের পর পর্যাপ্ত দাম মিলছে না। প্রতিপিস ডিম উৎপাদনে খরচ ৬.৫০ টাকা হলেও তা বিক্রি হচ্ছে ৫.৫০ টাকায়। ফলে লোকসান গুণছেন খামারিরা। মুরগির খাবারের দাম বেড়েই চলে লাগামহীন, বাড়ছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুত খরচ, রোগ-বালাইয়ে মুরগি মরে সয়লাব হলেও মিলছে না কোন সরকারি ঋণ। করোনাকালীন ৪ শতাংশ হারে ঋণের ঘোষণা দিলেও সরকারি এ ঋণ অধিকাংশ খামারি পান নি। সবমিলিয়ে নতুন করে কেউ আর এই ব্যবসায় পা বাড়াচ্ছেন না বরং বড় মূলধনের ব্যবসায়ীরা মুরগি চাষ বাদ দিয়ে অন্যদিকে ঝুঁকছেন।
পোল্ট্রি ফিডের দাম বৃদ্ধি এবং ডিমের দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসায় লোকসানের মুখে খামারিরা। বেড়েছে ডিমের উৎপাদন খরচ। খামারিরা বলছেন, ফিডের মূল্যবৃদ্ধিতে ধংসের মুখে পোল্ট্রি খাত।
দিনের পর দিন লোকসানে থাকা দেশের বিভিন্ন জেলার অনেক খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ খামারি ঋণ করে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়েছেন। তারা না পারছেন খামার বন্ধ করতে, না পারছেন চালাতে।

বাগমারা উপজেলার হাট মাধনগরের খামারী ফরিদুল ইসলাম বলেন, সরকারকে একটা কথায় বলব, জনগনের মুখের দিকে তাকিয়ে যেন বাচ্চা, খাবার ও ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন। তাছাড়া সারা বাংলাদেশে মুরগী খামারীরা একসাথে উৎপাদন বন্ধ করে দেব।। বিশ্ব বাজারে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি অজুহাতে ডিলার, কোম্পানী এই শিল্প নিয়ে নোংরা খেলা শুরু করেছে। অনেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারছেন না। কারন, কমবেশি আমরা সবাই ঋণের মধ্যে ডুবে আছি। এ জন্য জিম্মি হয়ে লাভ না হলেও লাভের আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিদেশে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলে কোম্পানিগুলো ১৬০০ টাকা ফিডের বস্তা এখন ২৩০০টাকায় বিক্রি করছে। ফলে প্রতি বস্থায় ৭০০ টাকা বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে। ৩০০ টাকার ভ্যাকসিনের দাম হয়েছে ৫৫০টাকা। ফলে আমরা মাঠে মারা যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক পর্যায় ও বড় খামারিরা ডিম উৎপাদন করেও দাম পাচ্ছেন না। মুরগি পালনে ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। ডিম ও মাংসের দাম কমলেও বাড়ছে বাচ্চা ও ওষুধের দাম। ডিমপাড়া মুরগির এক দিনের বাচ্চার দাম বাড়িয়েছেন হ্যাচারি মালিকরা। তাঁরা সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট করে বাচ্চার দাম বাড়িয়েছেন। বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। আর তা না পারলে খামারির এই লোকসান ঠেকানো সম্ভব নয়। বাচ্চার দাম হাতের নাগালে থাকলে উৎপাদন খরচ কমে যায় এবং লাভবান হওয়া যায়। বাচ্চার দাম ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকার বেশি হলে লাভ সম্ভব নয়।